রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

সন্ধ্যা ভ্রমণে আমরা

শিক্ষক সংগঠনের মিটিং এ বক্তৃতা।

শ্রদ্ধেয়, আজকের সভার সভাপতি আন্যান্য সদস্যদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন আমরা বিগত প্রায় বেশ কিছুদিন যাবৎ অঞ্চলগত ভাবে সভা করেছি, সেই সভা গুলিতে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল নতুন করে কোর কমিটি নির্বাচন করা, আমরা তা করেছি, এবং আজ সেই নব নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে আজকে আমাদের এই কোর কমিটির সভা আজকের সভায় আমাদের যে সমস্ত বিষয় গুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে, তা হলো, )বিগত দিনের সাংগঠনিক হিসাব পেশ ) বিগত দিনের সাংগঠনিক কর্মপন্থা নিয়ে পর্যালোচনা ) ভবিষ্যতের সাংগঠনিক কর্মপন্থা নিরুপন
যাইহোক বিগত দিনের সমস্ত হিসাব আমি প্রকাশ করলাম, এই কম্পিউটারাইজড  হিসাবের হিসাব বিবরণ গুলি সমস্তই আমার হিসাব রাখার খাতাতে লিপিবদ্ধ আছে, প্রয়জনে সেই খাতাও আপনারা দেখে নিতে পারেন। কিন্তু দৈনন্দিন সংঘঠন চালানোর হিসাব -সব কিছু আমার পক্ষে লিখে রাখা সম্ভব হয়নি, তাই তার আনুমানিক একটা খরচা আমি পেশ করেছি।
সাথি, আজ কিছু কিছু বিষয় উল্লেখ না করে পারছি না, যে গুলো আমার মন কে ভীষণ ভাবে আঘাত করেছে। সেদিন আমি এড়াল অঞ্চলে কোর কমিটি নির্বাচনের জন্য মিটিং ডেকেছিলাম অভিরামপুর স্কুলে, কিন্তু সেই মিটিং- এমন কিছু প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হয়ে ছিল যা আমার ধারাণার অতীত ছিল। সেদিন অঞ্চলের আমার কিছু সতীর্থ বাচ্চা ছেলের মতো বায়না ধরেছিলেন আমাদের সার্কেলের সাংগঠনিক হিসাব পেশ করার। আমি পেশ করতে পারিনি। প্রথমতএকটা অঞ্চলের মিটিং কখনই সার্কেলের হিসাব পেশ করার নিয়ম নয়। দ্বিতীয়ত, সেই সময় আমার কাছে হিসাব রেডি ছিলনা বলে দিতে পারিনি। আমাকে যদি বলে দেওয়া হোত অঞ্চল কমিটির বৈঠকে হিসাব পেশ করতে হবে  তাহলে আমি নিশ্চয় হিসাব পেশ করতাম। আর কেনই বা হিসাব পেশ করতে পিছপা হবো? আমি চুরি করেছি না ডাকাতি করেছি যে হিসাব পেশ করতে পিছপা হবো? তবু সেদিন আমার সতীর্থদের এমনই বহিঃপ্রকাশ ছিল যে আমি নাকি এই সংগঠন থেকে বিশাল টাকা ঘাবলা করে আমি আমার বাড়ি গাড়ি করেছি!
আসলে সেদিন তাদের উদ্দেশ্য ছিল সভাটিকে বানচাল করা, কারণ সেদিন মিটিং কোন গঠন মূলক আলোচনা হয়নি। সেদিন যে সমস্ত আলোচনা বা প্রশ্ন উঠে এসেছিল তা সবই অবান্তর। আমি জানিনা আমার বেশ কিছু সতীর্থদের সংগঠন সন্মন্ধে ধারনা টা ঠিক কি- সংগঠন কি শুধুই দাবী দাওয়া আদায়ের জন্য জঙ্গিপনা আন্দোলন করা? শুধু পাওনা গন্ডা আদায় করা ছাড়া কি আমাদের আর কোন কর্মসূচী  হতে পারে না?
আমার ভাবতে অবাক লাগে আমাদের এই সার্কেলে প্রায় ম্যাক্সিমাম স্কুলের টিচাররা নানান সমস্যায় জর্জারিত, কোন স্কুলে টিচারদের সাথে টিচার দের সমস্যা, কোথাও আবার টিচার দের সাথে পাবলিক গার্জেন দের সমস্যা, কোথাও আবার আমাদের টিচাররা পলিটিক্সের শিকার। কিন্তু দুঃক্ষের বিষয় আমার কিছু সতীর্থের সেই দিক নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, কোন আলোচনা নেই, আজ হয়তো আমার সেই সতীর্থরা সেই সব সমস্যার মধ্যে পড়েনি, তাই তাদের এই সব দিকে কোন মাথা ব্যাথা নেই, কিন্তু যারা পড়েছেন তারা জানেন এইসব ক্ষেত্রে সংগঠনের ভূমিকা কতখানি। একটা দিন যদি আমার মোবাইলটা নিয়ে নিজেদের কাছে রাখতেন তাহলে বুঝতেন আমাদের এই সার্কেল কত রকম সমস্যায় জর্জারিত। না তারা আমাকে কেউ ডিএ কেন ৫০ শতাংশ বাকি আছে কিংবা গ্রেড পে কেন চালু হয়নি, হেড টিচার রিকুটমেন্ট এর জন্য কেন সারকুলার জারি হচ্ছে না- সেই সব নিয়ে একটি দিনের জন্যেও ফোন করেনি। তাদের একটাই কাতর আবেদন, আমার সমস্যাটা সমাধান করেদিন, আমি যেন শান্তিতে চাকরি টা করতে পারি......
আমরা চেষ্টা করেছি সেই সব সমস্যার সমাধান করা, হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছি, আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফল হতে পারিনি। আর এইসব সমস্যার সমাধান করতে গেলে চাই মজবুত সংগঠন। তাই সংগঠন মানে শুধু পাওনা গন্ডা আদায় করা নয়, সংগঠনের আর এক নাম আত্মরক্ষাও। সংগঠন আমার কাছে একটা বৃক্ষসম। বৃক্ষ যেমন ফুল ফল দেই, তেমনি প্রাকৃতিক ঝঞ্জা থেকে রক্ষাও করে, সংগঠন তেমিনি একদিকে যেমন সংগঠিত হয়ে  আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি দাওয়া আদায়ের পথ সুগোম করে, তেমনি আবার সংগঠিত হয়ে নিজেদের কে সুরক্ষিত রাখে।
আমরা শাসক দলের সমর্থিত সংগঠন। তাই আমরা হয়তো পারিনি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গিয়ে নিজেদের দাবিদাওয়া আদায় করতেবিশেষ করে একটা সার্কেলের সীমিত ক্ষমতা নিয়েতো একটা জেলা বা রাজ্য স্তরের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যায় না, কিন্তু আমরা পেরেছি নিজেদের কে শুরক্ষিত রাখতে। একটা সময় ছিল যখন সার্কেল এডজাস্টমেন্টের কোন মা বাপ ছিল না। নেতা থেকে এস আই সবার কাছেই টিচাররা ছিলেন যেন বাড়ির মান্দার বা বোটারে মুনিশ, যাকে যখন খুশি যেখানে খুশি ট্রান্সফার করেছে, নিজেদের মতের না হলেই তাকে যা খুশি তাই শাস্তি দিয়েছে, তার প্রত্যক্ষ অভিঙ্গতা এই অধমের আছে। একটা সময় কোটা অঞ্চলের এমন কোন স্কুল ছিলনা যেখানে আমাকে পাঠানো হয়নি। শুধু কি কোটা অঞ্চল! শিতের সময় পোষ-মাঘ মাসে এড়াল অঞ্চলের তোয়াতলা মর্নিং স্কুলেও আমাকে দেওয়া হয়েছিল! সেই দিন গুলির কথা আমার আজো মনে পরে, শিতকালে আটটার আগে সকাল হতে হয়না, সেখানে ছয়টা কুড়ির মধ্যে স্কুলে ঢুকতে হোত। কোন কোনদিন ঘন কুয়াশা আর চোখের জ্বল এক হয়ে যেত, কেন যে আমাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, আমার যে কি অপরাধ আমি আজো ভেবে পাইনি। আজো পর্যন্ত আমার নামে কোথাও কোন অভিযোগ নেই, কোথাও কোন মাস পিটিশান জমা পরেনি, তার সত্বেও আমাদের মতো বেশ কিছু টিচার কে টার্গেট করা হোত। এর পর তিন বছর আমাকে একপ্রকার বনবাসে প্রেম গঞ্জে দেওয়া হয়েছিল, সেক্ষেত্রেও আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম, একটা টু-টিচার স্কুলে দুই জন টিচার থাকতেও একটা ঘাটতি থাকা ফোর টিচার স্কুলকে আরো একটি ঘাটতি করে আমাকে দেওয়া হয়েছিল! ভাবতে পারেন সেই সময় কি চলতোযাইহোক এই গুলো হচ্ছে নমুনা, শুধু আমার ক্ষেত্রে না অনেক জনের ক্ষেত্রেও এই একই ধরনের অবিচার করা হয়েছিল। আজ তিন বছর হতে যাচ্ছে, আমরা ইউনিয়ন চালাচ্ছি। আচ্ছা বলুন তো এইরকম কোন ঘটনা কোন অভিযোগ এই তিন বছরে শোনা গেছে কিনা? শোনা যায়নি, সবথেকে বড় কথা হতে দিইনি। এস আই স্যার কিংবা অফিস স্টাফরা চেয়েছিলেন নিজেদের মতামত গুলো চাপিয়ে দিতে কিংবা নিজেদের মত করে সব কিছু করতে, কিন্তু না, পারেনি, সব কিছু তীক্ষ্ণ নজরে রাখা হয়েছিল, পান থেকে চুন খসলেই ধরা হয়েছে, সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন অফিসে গেছি, সবকিছু নখদর্পনে রেখেছি।
এই তিন বছরে সার্কেলের কোন টিচার যখনি বিপদে পড়েছে তখনি তার পাশে ছূটে গেছি, তার সমস্যা কে সমাধান করেছি, কিংবা করার চেষ্টা করেছি। সব ক্ষেত্রেই যে সফল হয়েছি তা নয়, একমাত্র রানীগঞ্জের কেশটাতে আমরা অসফল হয়েছি। তাও শিক্ষিকা সেই সময় আমাদের মেম্বার শিপ নেননি। তবু ছুটে গেছি। তাকে আমরা সাধ্যমত বাচানোর চেষ্টা করেছি, এক্ষেত্রে যে আমরা পুরোপুরি অসফল তা বলতে পারিনা। আমিতো বলবো এক্ষেত্রেও আমরা অনেকটাই সফল। আজ তিন বছর আফিস কে নিজেদের হেপাজতে রাখবো বলে  কনটিনিউ তিন বছর বিল করে যাচ্ছি, যখন অনলাইন স্যালারি বিল এলো, তখন তার নেতৃত্ব দিয়ে নির্ভুল ভাবে সমস্ত টিচারের সমস্ত তথ্য আপলোড করেছি। আজো যদি কোন টিচারের যদি সামান্য কিছু ভূল দেখি তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ডেকে তার কাছে সঠিক তথ্য নিয়ে নির্ভুল করার চেষ্টা করেছি, বা করছি। পাশাপাশি জেলা অফিসের সাথে সদ্ভাব রেখে প্রতিটি কাজে তাদের সহযোগীতা আদায়ের চেষ্টা করেছি। এই তো মাস কয়েক আগেকার ঘটনা, জেলা থেকে স্যালারি বিল পাস হয়ে ট্যাজারি চলে যাওয়ার পর খবর আসে আমাদের সার্কেলের  তিলং আদিবাসীর দিলিপ কিস্কুর কোন কারণে বেতন আটকে গেছে। এস আই স্যার খবর পেয়ে ভীষণ নার্ভাস হয়ে আমাকে ফোন করে জানালেন- এই রকম ঘটনা, আপনি প্লিজ যান, আমি ফোন করেছিলাম, জেলা অফিস বলছে, বিল সব পাস হয়ে  ট্যাজারিতে চলে গেছে, এখন আর কিছুতেই কিছু করা যাবে না। পরে এরিয়ার বিল করে বার করতে হবে, অর্থাৎ চার-পাঁচ মাসের আগে এই মাসের স্যালারি পাওয়া যাবে না! ভাবুন! এই পরিস্থিতিতে সঙ্গে সঙ্গে জেলা অফিস গিয়ে বেলা এগারটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ডি আই, চেয়ারম্যান, হিসাব রক্ষক, বড় বাবু ছোট বাবু যত বাবু আছে সবার সাথে লড়াই করে স্যালারি বিল পাস করিয়ে বাড়ি এসেছি! কেউ কিছু টের পাইনি, সবার এক তারিখে বেতন ঢুকেছে, দিলিপ বাবুর তিন তারিখ। এই রকমি নানান সমস্যায় নিজেকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে, বা হচ্ছে, যেহেতু আমি প্রেসিডেন্ট বলে এই অতিরিক্ত দায়িত্ব গুলো আমি মাথা পেতে নিয়েছি। আর মাথা পেতে নিয়েছি এই কারণেই যে আপনারা পাশে আছেন বলে, একটা সংগঠন আছে বলে। এই সংগঠন গত তিন বছরে পুরানো ধ্যান-ধারণা বদলে মাত্র দুইশত টাকার বিনিময়ে সার্কেলগত ভাবে সার্কেল খেলা পরিচালনা করেছে। বাকি খরচা পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ম্যানেজ করা হয়েছে। এই ভাবেও কম খরচে সুষ্ঠ ভাবে খেলা পরিচালনা করা যায় তা এই সংগঠন দেখিয়েছে। পাশাপাশি  গত তিন বছরে সদ্য অবসর নেওয়া টিচারদের সার্কেলগত ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির সহায়তায় শিক্ষক দিবসে সন্মান জানিয়েছে, মাত্র স্কুল পিছু চল্লিশ টাকা করে! তাই আজ আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আচ্ছা বলুন তো এইগুলো কি সংগঠনের ভূমিকা  নয়? এই তিন বছরে যে ভাবে সংগঠন চালানো হয়েছে সেগুলো কি কিছুই নয়
এতকিছু করা সত্বেও আমার কিছু সতীর্থ প্রশ্ন তুলেছে গত তিন বছরে সংগঠনের ভূমিকা কি আছে? তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলি, হ্যা আমরা যদি পারতাম খেলার জন্য ৬০০-৭০০ করে চাঁদা নিতে, আমরা যদি পারতাম সন্মেলনের নামে ৪০০-৫০০ করে চাঁদা নিতে, আমরা যদি পারতাম এখানে চাঁদা ওখানে চাঁদা, আর কেউ যদি তার প্রতিবাদ করে তাহলে চোখ রাঙানি, ট্রান্সফার... আর লোক দেখানি সরকারের বিরুদ্ধে কিছু চাটুকদার বক্তৃতা দেওয়াযে বক্তৃত্বা আন্দোলনে কাজের কাজ কোনদিন কিছু হয়নি। আমরা যদি পারতাম ট্রেনিং এর নামে নেতাদের ধরে ধরে নিয়ে এসে বক্তৃত্বা দেওয়াতে। আমরা যদি পারতাম ট্রেনিং এর নামে আসা সরকারি বাজেট নয়ছয় করে হিসাব না দিতে- তাহলে হয়তো আমরা খুব ভালো সংগঠক হতাম! কিন্তু আমরা তা করিনি, যতটুকু যা করা দরকার ততটুকু করেছি, এখনো পর্যন্ত এই তিন বছরে সংগঠনের জন্য মাত্র ২০০টাকা চাঁদা নিয়েছি।
আমার কিছু সতীর্থ প্রায় সব সময় সব জায়গাতেই নিজেদের  জাহির করে একটা কথা বলেন তিনি বা তারা এই সংগঠন কে জন্ম দিয়েছেন দাঁড় করিয়েছেন বড় করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। মানে নিজেদের কে একটা কৌলীন্যের আসনে তুলে ধরতে চান আর কি। আমি এই নিয়ে কোনদিন কোন কথা বলিনি, সব সময় মুখ বুজেই সহ্য করে এসেছি। বিশেষ করে আমি নিজেকে সংগঠক বা দক্ষ সংগঠক হিসাবে তাদের মতো কোনদিনই ভাবিনি। আমার রাজনৈতিক অতিত খুবই সাধারণ২০০৪ সালে চাকরি পেয়েছি। চাকরি পাওয়ার পর রাজনীতি করতে কোনদিন সামনের শাড়িতে আসিনি। বরঞ্চ বরাবরই পেছনের শাড়িতে ছিলাম, কিন্তু ২০১০ সালে আমাকে যখন কোন কারণ ছাড়ায় প্রেমগঞ্জে বদলি করে দিলো তখন আর থাকতে পারলাম না, মনে মনে প্রতিজ্ঞা নিলাম এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবই, দাঁড়াতেই হবে আমাকে। সেই সময় শিবনাথ মালিক গৌতম মাজির সহযোগী হয়ে এই সার্কেলে আমরা তৃণমূল শিক্ষাসেল শুরু করেছিলাম, কিছুদিন বা খুব কম সময়ের জন্য গৌতম দা শিক্ষাসেলের মনোভাব দেখালেও উনি আবার নিজের সংগঠনে ফিরে যান। আমি আর শিবনাথ মালিক শিক্ষাসেল চালিয়ে যেতে থাকি, কিন্তু শিবনাথ মালিক কোনদিনই মেম্বারশিপের কাজে বের হন নি, কোনদিন মিটিং ডাকেন নি। উনি শুধু অফিস নিয়েই থাকতেন, মেম্বারশিপের যাবতীয় কাজ আমি সামলাতাম। আমি কোটা অঞ্চলের সমস্ত আংশিক ভাবে দেবশালা ভাল্কী অঞ্চলের মেম্বারশিপ করেছিলাম। সেই সময় অনেক টিচারই সাক্ষি আছেন- যাদের মেম্বারশিপ করানো হয়েছিল। এইভাবেই ২০১১ ২০১২ চালালাম। কিন্তু শিবনাথ মালিকের এই মৌন হয়ে থাকা, মিটিং না ডাকা, অফিসটাও যে ঠিক মতো ম্যানেজ হোত তাও না, এই সব ব্যাপার গুলো আমাকে প্রচন্ড হতাশ করেছিল, বিশেষ করে যাদের কাছে আমি মেম্বারশিপ করেছিলাম তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা আমাকে আরো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো, ২০১৩ তে ঠিক সেই সময় বংশি বাবু আমাকে ফোন করেন। উনি বলেন জেলা সংগঠনের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে, আমাদের কে সন্মেলন করার দায়িত্ব দিয়েছেন, তুমি যদি মনে করো সংগঠন করবে তাহলে আসতে পারো, আমি বললাম নিশ্চয় মাস্টার মশাই, আমি তো আজ দুই বছরের উপর শুরু করেছি, আমি উপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি বলে পিছিয়ে আছি, আজ আপনারা যখন সেই পথ পেয়েছেন তখন পিছিয়ে থাকার আর কোন প্রশ্নই নেই।
তারপর তো আপনারা সবই জানেন। তাই আর বিশেষ কিছু বলতে চাইনা, আপনারাই বিচার করুন কৈলিন্যের অহংকার যারা দেখাচ্ছেন বা প্রায় দেখায় তারা কতটা সেই কৌলিন্যের আসনে বসার অধিকারি।
তবু আজ সংগঠন করতে এসে একটা কথা বলে রাখি, আমাদের এই শাখা সংগঠন গুলি বা গন সংগঠন গুলির কোন মূল্য নেই, এই গুলো সবই মূল বা মাদার পার্টির পারফরমেন্স এর উপর নির্ভর করে, মূল পার্টি  যদি চালিকা শক্তি হয় তো গণ সংগঠন বা শাখা সংগঠন গুলিও চালকের আসনে থাকবে, তাই এই সংগঠন কে জন্ম দিলো বা কে দাঁড় করালো এগুলো সবই ফালতু কথা, এক কালে আমরা এই সার্কেলেই অনেক বড় বড় তাবড় তাবড় নেতাদের দেখেছি, এমন নয় যে তারা আজ অবশর নিয়েছে বা ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেছে। সবাই এখানেই আছে কিন্তু কোথায় গেল তাদের সংগঠন বা নেত্রীত্ব? কোথায় গেল তাদের সেই গম্বর ভেদী কণ্ঠস্বরতেমনি আমাদের এই সংগঠনের মূল চালিকা শক্তি তৃণমূল পার্টি কে নিয়ে, তৃণমূল পার্টি থাকলে আমরা থাকবো, নচেৎ আমাদেরকেও তল্পি তল্পা গুটিয়ে চলে যেতে হবে, তখন এই সংগঠনের যে যত বড়ই প্রতিষ্ঠাতা হোক বা জন্মদাতা হোক তাকেও ল্যাজ গুটিয়েই চলে যেতে হবে। তাই আমাদের উচিত মূল সংগঠনের পরামর্শ মেনে চলা।
আজ আমাদের সংগঠনের জেলা কমিটি লোকাল মাদার পার্টি আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন- আমাদের এই সংগঠন কে ঢেলে সাজাতে হবে, মেম্বারশিপ করাতে হবে, নতুন করে কোর কমিটি গঠন করতে হবে, সেই কোর কমিটি তে স্থানীয় টিচারদের একটা ভারসাম্য রাখতে হবে। এই নিয়ে আমার একটা ছোট্ট অভিমত- এবারে জুতো বিলে নিয়ে এড়াল অঞ্চলে আমাদের কোর কমিটির কোন সদস্য কে মূখ্য ভূমিকায় দেখা যায় নি, যেহেতু এই মূহর্তে এড়াল অঞ্চলে আমাদের লোকাল কোন প্রতিনিধি নেই। যাইহোক বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। পাশাপাশি সন্মেলন করতে হবে। আজ দুই বছরের অধিক হয়ে গেল আমরা সন্মেলন করিনি, চাঁদা নিইনি। শুধুমাত্র আমদের ঘাড়ে অতিরিক্ত চাঁদার বোঝা চেপে যাবে সেই   কথা ভেবে। কিন্তু এর একটা সীমা-পরিসীমা আছে, বছরের পর বছর এই ভাবে চলতে পারেনা। সন্মেলন সংগঠনের জীবন কাঠি, নতুন করে পথ চলার উদ্যম তৈরি করা। দু-বছরেও আমরা যদি কোন সংগঠনের সন্মেলন না করতে পারি তাহলে সেই সংগঠন কে জিয়িয়ে রেখে কোন লাভ নেই বলে আমি মনে করি। তাই আজ এই কোর কমিটির সভায় আমাদের নীতিগত গঠনগত সিদ্ধান্ত নিতেই হবে সন্মেলন করার জন্য। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা নীতিগত গঠনগত সিদ্ধান্ত নিন সন্মেলন করার, আমি আশা করবো এর কোন নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা আপনারা গ্রহণ করবেন না। আর যদি অন্যথা হয়, সন্মেলন করার জন্য যদি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করেন তা হলে আমাকেও নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতেই হবে, আমি জানবো- প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমি ব্যার্থ, এবং এই ব্যার্থতার দায় কাঁধে নিয়ে আমাকে যিনি বা যার এই পদে বসিয়ে ছিলেন সেই ব্লক সভাপতি জেলা কমিটির সভাপতির কাছে পদত্যাগ পত্র পেশ করতে হবে। পরবর্তী কালে ওনারা যা ভালো বুঝবেন তাই করবেন। এছাড়া আমার কাছে আর বিকল্প কোন পথ থাকবে না।
তাই আসুন, আজকের এই সভায় আমরা সব কিছু বিষয় নিয়েই গঠন মূলক আলোচনা করি, এবং গঠন মূলক সিন্ধান্ত নিয়ে এই সভাটিকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলি। ধন্যবাদ।  পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি জিন্দাবাদ। তৃনমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ

 ★★★★★★★★★★★★
মহেশ্বর প্রসাদ কুনুই
সভাপতি
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি

গুসকরা -১নং চক্র