শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১১

নির্মল গ্রামে পরিবেশ দূষণ!


বন্ধুগণ, যে ছবিটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এটি এক গ্রামের ছবি। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় বুদবুদ থানার অন্তর্গত কোটা চণ্ডিপুর গ্রাম। গ্রামটি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ‘নির্মল গ্রাম’ ভূষণে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। তো আসুন গ্রামটি সন্মন্ধে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই, ছবিটি গ্রামের উত্তর দিকে লালগঞ্জ পাড়ার। ছবিতে বিস্কুট কালারের পাঁচিল দেওয়া যে বাড়িটি দেখা যাচ্ছে সেটি একটি শিক্ষিত পরিবারের।এই পরিবারটি আজ থেকে ২৩বছর আগে এখানে জায়গা কিনে বসবাস শুরু করে। তখন তার চারিপাশে ১০০মিঃ মধ্যে কোনো বসতি ছিলনা। এই বাড়িটির উত্তর দিকে যে বসতি দেখা যাচ্ছে সেটি এক মেথর সম্প্রদায় পরিবারেরআজ থেকে ১২বছর আগে এই পরিবারটিও এখানে জায়গা কিনে বসবাস শুরু করে। যাইহোক গণতান্ত্রিক দেশে যে যেখানে খুশি জায়গা কিনে বসবাস করতে পারে তাতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সমস্যা টি অন্য জায়গায়- এরা প্রথম থেকেই শূকর চাষ করে। প্রথম দিকে হয়তো এতটা ব্যপকতা ছিলনা, যেহেতু পরিবারের কর্তা সরকারি চাকরি করতেনউনি অবসর নেওয়ার পর ওনার পরিবারের ছেলে বউ মেয়ে জামাই ইত্যাদি মিলে প্রায় ১৫-২০জন সদস্য সবাই এদের জীবিকাকে শূকর চাষ হিসাবে গ্রহণ করে। এখন এই শূকর চাষের ফলে কিভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে সে সন্মন্ধে একটু বর্ণনা দেওয়া যাক- আপনারা ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন একটি মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, এই রাস্তাটি সরকারি ম্যাপে ড্রেন সহ ২০ফুট চওড়া। গ্রামের অন্যান্য রাস্তা ঘাট, ড্রেন সংস্কার হলেও এই রাস্তাটি সরকার বা পঞ্চায়েতের নজরে পরেনি। যাইহোক এটাকে রাস্তা না বলে পথ বলাই ভালো। রাস্তার পাশেই একটা পুকুর, যে পুকুরটাই পাড়ার একপ্রকার সবাই সরবরাহ করে। ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন পুকুরের উত্তর পারে দুটি শূকরের গোয়াল। ওদের শূকর চাষের পদ্ধতি হচ্ছে- সারাদিন শূকর ছাড়া থাকবে, এর-তার বাড়ি ঢুকবে, গাছপালা সব্জি নষ্ট করবে, রাস্তা ঘাটে প্রসাব,পায়খানা করবে।বিকালে হোটেল থেকে পচাদূর্গন্ধ খাবার নিয়ে এসে খাওয়াবে, রাত্রের বেলায় শূকর গোয়ালে থাকবেআমি জানিনা কোনো সভ্য দেশে এভাবে অবৈধ ও মুক্তভাবে ঘনবসতির মাঝে শূকরের গোয়াল করে শূকর চাষ করে কিনা? এভাবে শূকর চাষের ফলে ঘনবসতির মাঝে যে যে সমস্যা গুলি হয়- ১)রাস্তা ঘাটে পুকুরের জলে শূকরের পায়খানা প্রসাব যা পরিবেশ কে ভীষণ ভাবে দূষিত করছে। ২) হোটেল থেকে যখন পচাগলা দূর্গন্ধ খাবার নিয়ে এসে খাওয়ায় তখন তার অতি তীব্র গন্ধে পাড়ার মানুষের টেকা দায় হয়ে পরে। ৩) শূকরের মাংস ব্রিক্রির জন্য তাকে নির্মম ভাবে খোলা জায়গায় হত্যা করা হয় যা শিশু মনে বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে এবং তার বিকট আর্তচিৎকার পাড়ার মানুষের জীবন ওষ্টাগত হয়ে পড়ে। ৫) শূকরের অবাধ বিচরণে মানুষের অতিকষ্টে লাগানো সব্জীপাতি, বাঁশের পোড়া ইত্যাদি নষ্ট।৬)অবৈধ শূকর চাষের ফলে নানান রোগের প্রকোপ ও আশঙ্কা ৭) আপনারা ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ঐ শিক্ষিত পরিবারের একেবারে নাকের ডগাতে (২০-২৫ফুটের মধ্যে) শূকরের গোয়াল করে এতবড় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, যা ওদের জীবনকে একপ্রকার নরকে পরিণত করা! ভাবুন, একট গণতান্ত্রিক দেশে কতবড় অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া!

বন্ধুগন, এর পরের ঘটনাটি শুনলে আপনারা আরো বিস্মৃত হবেন- এই সমস্ত অভিযোগ নিয়েই লালগঞ্জ পাড়ার বাসিন্দারা একটি গণ অভিযোগ করে পঞ্চায়েতে দিতে গিয়েছিলেন, নির্মল গ্রামের অঞ্চল প্রধান সে অভিযোগ পত্র নিতে অস্বীকার করেন, বাধ্য হয়েই তা রেজীষ্ট্রী ডাকে পাঠানো হয়। ঐ একই অভিযোগ পত্র দূর্গাপুর ইনভাইরুনমেণ্ট অফিস, আউশগ্রাম ২নং বিডিও অফিস ও বুদবুদ পুলিশ স্টেশনেও পাঠানো হয়। তার পরিপেক্ষিতে থানা ও বিডিও অফিস তদন্ত করে যান। বিডিও অফিসার সেই অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে পঞ্চায়েত কে অবিলন্বে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। অনেকদিন আগে একটা যাত্রাপালার নাম শুনেছিলাম ‘উপরে ভগবান নিচে অঞ্চল প্রধান’ অতএব নিচের অঞ্চল প্রধান ভগবান যেখানে সহায় থাকেন ক্রিকেটীয় ভাষায় তার যতই ক্যাচ উঠুক তাকে আউট করবে কে? এক্ষেত্রেও তাই- কোনো এক অদৃশ্য ভগবানের সহায়তায় দিনের পর দিন ঐ মেথর সম্প্রদায় পরিবারটি খোলা পরিবেশে অবৈধ অবৈজ্ঞানিক প্রথায় পরিবেশ কে দূষীত করে শূকর চাষ করে যাচ্ছেন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন